ছবি:দ্যা মাইনিচি
নিম্ন জন্মহারের আরও একবার রেকর্ড করল জাপান।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে,২০২২ সালে জাপানে জন্ম নিয়েছে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৭৪৭ জন শিশু, যা ২০২১ সালের চেয়ে ৫ শতাংশ কম।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়,দেশের নারীদের সন্তান জন্মদানের অনিচ্ছাসহ নানা কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমেছে জন্মহার।বর্তমানে জাপানে বিভিন্ন বয়সী জনবিন্যাসের যে চিত্র তাতে জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে দেশটির প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সারাজীবনে গড়ে ন্যূনতম ২ দশমিক ০৭ জন সন্তান জন্ম দেওয়া উচিত। সেখানে গড়ে একজন জাপানি নারী তার সারা জীবনে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন ১ দশমিক ২৪৬৫ জন। অথচ ২০০৫ সালেও এই সংখ্যা ছিল ১ দশমিক ২৬০১।
কর্মব্যস্ততা, নাগরিক জীবনের নানামুখী চাপ, সন্তান জন্মদান, প্রতিপালন ও শিক্ষায় উচ্চব্যয়সহ বিভিন্ন সামাজিক কারণে জাপানে প্রতিবছরই হ্রাস পাচ্ছে জন্মহার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, উন্নত পরিষেবা ও উন্নত চিকিৎসাসেবার কারণে দেশটিতে বাড়ছে গড়আয়ু। ফলে জাপানের জনবিন্যাসে বয়স্ক ও কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়া নারী-পুরুষদের সংখ্যা বাড়ছে, কমছে কর্মক্ষম তরুণ-তরুণীর সংখ্যা।
আরও কয়েক বছর যদি এই সংকট চলতে থাকে, তাহলে জাপানের সমাজজীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় শুরু হবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন জাপানের সমাজবিজ্ঞানীরা। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাও এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
চলতি সপ্তাহে টোকিওতে একটি সরকারি ডে কেয়ার সেন্টার উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে ফুমিও কিশিদা বলেন,শিগগির যদি জন্মহারে বৃদ্ধি না ঘটে, সেক্ষেত্রে ২০৩০ সাল থেকে জাপানের জনসংখ্যা ভয়ানকভাবে কমতে শুরু করবে।
প্রধানমন্ত্রী কিসিদা বলেন,জন্মহার এখন এতই উদ্বেগজনক যে আগামী কয়েক বছর পর হয়ত জাপান জনবলের অভাবে নিজেদের স্বাভাবিক কার্যক্রমই চালাতে পারবে না।
বার্ষিক জন্মহার বাড়াতে গত ৩১ মে শিশুকল্যাণ খাতে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বরাদ্দও ঘোষণা করেন কিশিদা। তার সেই ঘোষণার মাত্র দু’দিনের মধ্যেই নিম্ন জন্মহারের নতুন রেকর্ড দেখল জাপান।
মন্ত্রী শিগেইউকি গোটো বলেন,এপ্রিল থেকে চলতি অর্থবছরের জন্য, শিশু এবং পরিবার-সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি নতুন চালু হওয়া সংস্থার জন্য প্রায় ৪.৮ ট্রিলিয়ন ইয়েন বরাদ্দ করেছে সরকার।পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে শিশু নীতিতে তার ব্যয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রাখে সরকার।
অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,১ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী শিশুদের সংখ্যা ছিল ১৪.৩ মিলিয়ন, যা এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ৩০০,০০০ জন কম।সরকারী তথ্য আরও জানায়,অক্টোবর পর্যন্ত জাপানের ৪৭ টি প্রিফেকচারের শিশু জন্মের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
এরআগে জাপানের জন্মহার মোকাবেলায় বুধবার শিশুদের যত্নের বাজেট ২৫ বিলিয়ন বৃদ্ধির ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।পাশাপাশি মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন জাপানের বার্ষিক শিশু যত্নের বাজেট প্রায় ৩.৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন ($২৫ বিলিয়ন) বৃদ্ধির জন্য।
এছাড়া আগামী তিন বছরের মধ্যে এই খাতে বরাদ্দের অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা তার রয়েছে বলেও বৈঠকে জানিয়েছেন কিশিদা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতই অর্থনৈতিক চাপ আসুক সামনের বছরগুলোতে বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে তার সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
উল্লেখ্য,শুধু জাপান নয়, ইউরোপের অনেক দেশই শিশু জন্মহার নিয়ে একই সমস্যায় ভূগছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রবীণের সংখ্যা। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীতে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতেও জাপানের মতোই একই সমস্যা দেখা দেবে।
আর সি