এই ছেলে তুমি তো সারাদিন শুধু মোবাইল নিয়ে বসে থাকো আর ঘুমাও অন্য কোন কাজ নেই। পড়াশোনা তো করোনা সারাক্ষণ শুধু মোবাইল চাপাচাপি।
আজ থেকে তোমার পড়াশোনা বন্ধ। এই স্বপনের মা ওকে বলে দিও আমি আর ওর পড়াশোনা খরচ দিতে পারবো না। শালা আমি সারাদিন খাইটা মরি, সেই কষ্ট কি ওদের চোখে পরে না। এভাবেই কেটে গেল সারাদিন।
ঐ দিন ঠিক রাত ১০.৫৩ মিনিটে বাবা হঠাৎ আমার ঘরে। স্বভাবতই তিনি আমার বেড রুমে খুব কম আসেন। এসে বললেন তুমি এখনো ঘুমাও নি। বেশি রাত জেগে থেকো না, শরীর খারাপ করবে। তুমি তো এমনিতেই দিন দিন শুখাই যাইতেছো। দিনের বেলায় তোমায় খুব বকেছি তুমি রাগ করছো বাবা?
আমি উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম। চাইলে কোন কথা মুখে আসছিলো না।
কিন্তু ভেতর টা কেঁপেছিলো।
বাবা কাছে আসলেন, পাশে বসলেন কাঁধে হাত রাখলেন,
অতঃপর বললেন, বাবা আমি কার জন্য এতো কষ্ট করি বলো?
শুধুই তোমাদের জন্য।
সেই সকাল শুরু করে মধ্যে রাত পর্যন্ত খাটাখাটি করি কার জন্য? এইতো সেদিন আনোয়ার চৌধুরী নামক জৈনক ব্যক্তির হাতে লাঞ্চিত হলাম কাদের জন্য? কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাকে দোকানে যাওয়া আটকা তে পারেনি। কোন আত্নীয় স্বজন মৃত্যু ছাড়া আমার কর্মক্ষেত্র, আমি কখনোই বন্ধ রাখিনি। এই অসম্ভব পরিশ্রম কাদের জন্য? বর্ষার দিনগুলোতে আকাশের প্রচুর ডাক আর বৃষ্টি হওয়াতে বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও আমার দোকান বন্ধ ছিলো না।
বলতে পারো তা কাদের জন্য?
শুধুমাত্র তোমাদের দুই ভাইবোনের জন্য।
এই যে আমার শার্ট গত দুই বছর আগে কিনা! এই দেখ ডানা ছেড়া!এবার তোমার মা কে ঈদে নতুন কিছু কিনে দিতে পারিনি!
বলতে পারো তা কাদের জন্য?
অথচ তোমার গায়ে যে শার্ট
তা আমার দুদিনের কামাই দিয়ে কেনা।
সবসময়ই চাই আমার সন্তানরা ভালো থাকুক।
ঐ যে জুতা দেখতে পাচ্ছো তা ইতিমধ্যে তিন তিন বার সেলাই করিয়েছি। বলতে পারো তা কার জন্য?
তুমি যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছো তা আমার ফোনের ছেয়ে
১৫ গুন দামে বেশি!
অথচ আমার এই ফোনটার দাম মাত্র ১০২০ টাকা।
বলতে পারো তা কাদের জন্য।
পড়াশোনা করার জন্য তোমার কোন চাওয়া কি আমি অপূর্ণ রাখছি?
যখন যা চাইছো সাধ্যের বাহিরে
তখন তাই দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
অথচ তোমরা পড়াশোনা করো না। আমার এসব আর ভাল্লেগে না।
যার যার মতো সে নিজের পথ বেছে নাও।
তখনও আমি কিছু বলতে পারছিলাম না অঝোরে চোখ থেকে পানি পরছিলো।
মা দরজার পাশে দাড়িয়ে বললো ও ছোট মানুষ এরাব থামো অনেক হইছে।
ওর মধ্যে যদি মনুষ্যত্ববোধ থাকে এতেই ওর জ্ঞান হবে নচেৎ আর সম্ভব না। আমি কোন কথা না বলে বাবাকে জরিয়ে ধরলাম।
বললাম বাবা ভুল হয়ে গেছে আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি।
ওরে পাগল বাবা মার কাছে কখনোই ক্ষমা আর দোয়া চাইতে হয় না তা মন থেকেই আসে।
বাবা, বাবা তোমার তুলনা হয় না। তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।
আজ ২১ জুন রোববার বাবা দিবস। এখন আসুন জেনে নিই বাবা দিবস সম্পর্কে কিছু তথ্য বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে থেকে পিতৃ দিবস পালন শুরু হয়। আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল - এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু।
ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই, আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়।[১] আবার, সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও পিতৃ দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে, ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না।
ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মা’কে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯শে জুন, ১৯১০ সালের থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।
পিতৃ দিবস বেশ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই পালিত হতো! আসলে মা দিবস নিয়ে মানুষ যতটা উৎসাহ দেখাতো, পিতৃ দিবসে মোটেও তেমনটা দেখাতো না, বরং বাবা দিবসের বিষয়টি তাদের কাছে বেশ হাস্যকরই ছিল। ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টায়, ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে পিতৃ দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়।
১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন পিতৃ দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পিতৃ দিবস হিসেবে পালিত হয়।[ উইকিপিডিয়া]
কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে বাবা-মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-বাবা পরিবারের চালিকা শক্তির প্রধান। বাবা সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ বন্ধুও উত্তম পথপ্রদর্শক। বাবা-মা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এ পরম সত্য কথা। পৃথিবীতে সন্তানের সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার কথা শুধুমাত্র বাবা-মা-ই ভেবে থাকেন। এ জন্যই পৃথিবীর সকল ধর্মেই বাবা-মাকে সর্বাধিক সম্মান দান করেছেন।
পবিত্র কুরআনুল কারিমের ১৫ জায়গায় বাবা-মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার পালন কর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত কর না এবং বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন; তবে তাঁদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে বল শিষ্টাচারপূর্ণ কথা।
(সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবার মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন; আবার বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’ সুতরাং আমাদের সকলেই উচিত প্রিয় বাবা মার সাথে সর্বদা ভালো আচরণ করা। এবং তাঁদের জন্য দোয়া করা। মহান আল্লাহ যেন প্রিয় বাবা কে সদা সুস্থ এবং নেক হায়াত দারাজ করেন। সেই সাথে মাকেও।( আমিন)
লেখক,
শিক্ষার্থী
অর্থনীতি বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।