- রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

| পৌষ ৭ ১৪৩১ -

Tokyo Bangla News || টোকিও বাংলা নিউজ

জাপানের মহা হানশিন ভূমিকম্প

টোকিও বাংলা নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১১ জানুয়ারি ২০২২

জাপানের মহা হানশিন ভূমিকম্প

ছবি:ইন্টারনেট

জাপানের ভৌগলিক অবস্থান গত কারণে পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয় দেশটিতে।প্রতি বছর গড়ে দুই হাজার এর মত ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে জাপানে।এমনকি ২০১১ সালে দেশটিতে দশ হাজারের বেশি ভূমিকম্প হয়।মহা হানশিন ভূমিকম্প Hanshin Awaji daishinsai বা কৌবে ভূমিকম্প ১৯৯৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ০৫:৪৬:৫৩ ঘটিকায় হানশিন নামে পরিচিত জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হিয়োগো অঞ্চলে সংঘটিত হয়। এর মাত্রা ছিল ৬.৯ এবং তীব্রতা স্কেলে ৭ জেএমএ ছিল।ভূকম্পনটির স্থায়িত্ব প্রায় ২০ সেকেন্ডের মতো ছিল।কোবে শহর থেকে ২০কিমি দূরে আওয়াজি দ্বীপের উত্তরপ্রান্তে ১৭ কিমি ভূগর্ভে ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল।

ভূমিকম্পের ফলে ৬,৪৩৪ জন লোক প্রাণ হারায় যার প্রায় ৪,৬০০ জন কোবে অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল।প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ১৫কোটি জনসংখ্যা সহ উপকেন্দ্রের নিকটস্থ শহর কোবেতে সবথেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১৯২৩ সালে গ্রেট কান্টো ভূমিকম্পের পর ২০শতকের মধ্যকার সময়ে এটি জাপানের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল। এ ভূমিকম্পের ফলে ১,০৫,০০০ এরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল জাপানে।

নামকরণ

জাপানের বাইরে এই ভূমিকম্পকে সাধারণত কোবে ভূমিকম্প নামে ডাকা হয়। জাপানে, এই ভূমিকম্প বিপর্যয় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্য গ্রেট হানশিন-আওয়াজি ভূমিকম্প দুর্যোগ হানশিন-আওয়াজি ডাইশিনসাই নামে পরিচিত।সংক্ষেপে হানশিন ডাইশিনসাই নামে পরিচিত। হানশিন মূলত ওসাকা এবং কোবের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে বুঝায়। বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে এটি ১৯৯৫-এর দক্ষিণ হিয়োগো প্রশাসনিক অঞ্চলের ভূমিকম্প হেইসেই ৭ নেন বা হিয়োগো-কেন নুনবু জিশিন নামে পরিচিত। প্রধান ভূকম্পনের এক সপ্তাহ পর নামকরণ করা হয়  জাপান আবহাওয়া সংস্থা কর্তৃক নির্বাচিত হয় এ নাম। 

ক্ষয়ক্ষতি

ক্ষয়ক্ষতি অত্যন্ত ব্যাপক এবং গুরুতর ছিল। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ভূকম্পনে প্রায় ৪,০০,০০০ ভবন, অসংখ্য উবু সড়ক ও রেল সেতু, এবং কোবে বন্দরের ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ১২০টি অবতরণস্থল অমেরামত যোগ্য হয়ে পড়ে। ভূমিকম্পটি ৩০০টি অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি করে যা শহরের বেশির ভাগ অংশে দেখা যায়। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে বাধার সম্মুখীন হওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার ছিল। তাছাড়া নগরবাসীরা বেশ কয়েক দিন ধরে ভূমকম্পনের (অনুভূত ৭৪টি ভূমকম্পন যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল) ফলে বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছিল।

অধিকাংশ মৃত্যু হিয়োগো প্রশাসনিক অঞ্চলের শহরগুলি ও শহরতলিতে হয়েছিল যার সংখ্যা ছিল ৪,০০০-এরও বেশি। ১৮ বছরের কম বয়সী ৬৮ শিশু অনাথ হয়েছিল।৩৩২ শিশু তাদের বাবা বা মায়ের মধ্যে একজনকে হারিয়েছিলো।সবচেয়ে গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এলাকার পাঁচটি ভবনের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে পড়েছিল (বা বসবাসের অনুপযোগী ছিল)। কোবেের মধ্যাঞ্চলীয় ব্যবসায়িক জেলার প্রায় ২২% কার্যালয় ধ্বংস হয়ে যায় এবং সেই এলাকার অর্ধেকেরও বেশি বাড়িঘর অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। অধুনা ১৯৮১ ভবন কোড অনুসারে নির্মিত বহুতল বাসাবাড়ী কম ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।যেসব স্থাপনা ১৯৮১ ভবন কোড অনুসরণ না করে নির্মিত হয়েছিল সেগুলো গুরুতর অবকাঠামোগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 

বেশিরভাগ পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বাসাবাড়িতে ভারী টালি ছাদ ছিল যা ওজনে প্রায় দুই টনের মতো হত, যার ফলে এগুলোর পুনঃপুন টাইফুনকে প্রতিহত করার প্রবণতা ছিল, তবে এগুলো শুধুমাত্র হালকা কাষ্ঠ-সমর্থক ফ্রেম দ্বারা আটকানো থাকতো। যখন কাঠের সমর্থন খুলে পড়ত, তখন উপরের ছাদটি দেয়াল এবং অভ্যন্তরীণ ছাঁদ থেকে খসে পড়ত। নতুন ঘরবাড়িতে এ সমস্যা এড়ানোর জন্য দেয়াল এবং হালকা ছাদগুলিকে শক্ত করে লাগানো হত, তবে এগুলো টাইফুনের জন্য অপ্রতিরোধ্য ছিল না।মহাসড়ক ও সুড়ঙ্গসড়কের ছবিতে ভূমিকম্পের সবচেয়ে স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছিল, এবং ভেঙ্গেপড়া উড়াল হানশিন এক্সপ্রেসওয়ের ছবি বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতায় স্থান করে নিয়েছিল। 

অন্যান্য ঘটনা

এই ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম কনটেইনার বন্দরটি এবং কোবের শিল্প উৎপাদনের প্রায় ৪০% উৎসসমূহের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।ভূমিকম্পের ভয়াবহতার কারণে জাপানি স্টক মার্কেটে ব্যাপক দরপতন ঘটে, ভূমিকম্পের পরের দিন নিক্কি ২২৫ সূচক নেমে ১,০২৫ পয়েন্টে চলে আসে।

আর সি