- রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

| পৌষ ৭ ১৪৩১ -

Tokyo Bangla News || টোকিও বাংলা নিউজ

চেরি ফুলের জাদুকরী সৌন্দর্যের দেশ জাপান

চেরি ফুল নিয়ে জাপানিদের প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো উৎসব ‘হানামি’

ষ্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১০ মে ২০২২

চেরি ফুল নিয়ে জাপানিদের প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো উৎসব ‘হানামি’

প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে জাপানিরা চেরি ফুল নিয়ে উৎসব পালন করে আসছে।চেরি ফুলের উৎসবটি ‘হানামি’ নামে পরিচিত। হানামি জাপানি শব্দ। এর অর্থ হলো সবাই মিলে চেরি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা। 

চেরি ফুল জাপানের জাতীয় ফুল। চেরি ফুলকে জাপানিরা সাকুরা বলে। গুচ্ছবদ্ধ ফুলগুলো প্রধানত গোলাপি, সাদা ও লাল রঙের হয়। জাপানের এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে চেরি ফুলের গাছ নেই। 

চেরি ফুলের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে জাপানের বিখ্যাত কবি মাতসুও বাশো বলেছিলেন,''মানুষের দুটো জীবনের মাঝখানে আর একটি সময় আছে, আর সেটি হলো চেরি ফুল ফোটার সময়।'' 

সাধারণত মার্চ ও এপ্রিল মাসে সাধারণত চেলি ফুল দেখা যায়। এই চেরি ফুলকে নিয়ে জাপানিদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা চোখে পড়ার মতো। চেরি ফুলকে বরণ করে নিতে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটক আসেন। জাপান জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ।

চেরি ফুল গাছের পার্কগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। সবাই দল বেঁধে পার্কগুলোতে জড়ো হয় একসঙ্গে চেরি ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য।পার্কগুলোতে আয়োজন করে পিকনিকের। বর্তমানে এটি জাপানি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মূলত চেরি ফুল বরণ করে নেওয়ার জন্যই হানামি উৎসবের আয়োজন করা হয়। রাতে চেরি গাছগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়, যা সত্যিই চোখধাঁধানো। রাতের হানামিকে জাপানিরা ‘ইওজাকুরা’ বলে।

শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে অবিরাম খসে পড়েছে লাল, খয়েরি ও বাদামি পাতা। এরপর অপেক্ষায় থাকেন জাপানিরা। কখন ফুটবে এ ফুল। প্রেম আর ভক্তির এক মূর্ত প্রতীক যেন এই সাকুরা। চেরি ফুল ফোটাকে জাপানিরা গভীর আবেগের চোখে দেখেন।

শীতের পর বসন্তের ঝলমলে দূত হচ্ছে এই চেরি ফুল। ফুলগুলো যেন বলছে, ভয় নেই, আমি আসব, আমি আবার আসব, ফুটব, হাসব, তোমাদের ভরিয়ে দেব আমার যৌবনরে উচ্ছলতায়।

প্রস্ফুটিত চেরি ফুলকে ঘিরে গাছে গাছে রঙিন প্রজাপতিদের মেলা বসে। জাপানিজদের কাছে শোনা যায় এই ফুলরে নিজস্ব একটা জ্যোতিও আছে। রাতের অন্ধকারে গাছের ডালগুলো কেমন উজ্জ্বল হয়ে থাকে।

চেরি ফুলের সুগন্ধ আর মাধুর্য জাপানিদের মনে তুমুল প্রশান্তি এনে দেয়। চেরি ফুলকে ঘিরে যে উৎসব হয় সেটা দেখার জন্য লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে।

চেরিকে নিয়ে সারা বিশ্বেই চলে ব্যাপক উন্মাদনা। জাতীয় ফুল বলে জাপান এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে জাপানিরা এই ফুলটিকে নিয়ে উৎসব পালন করে আসছে। 

চেরি ফুলের সৌন্দর্য মনমাতানো হলেও এটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। তাই চেরি ফুল মানবজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। আর জাপানিদের জীবন-দর্শনের ওপরও এই চেরি ফুলের রয়েছ সুদূরপ্রসারী প্রভাব।

২০২১ সালে জাপানের চেরি ব্লসম উৎসবে যোগ দিয়েছে ৫০ লক্ষ লোক। আর এ নিয়ে দেশটির ব্যবসা হয়েছে ২৭০ কোটি ডলারের।জাপানের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে চেরি ফুলেরও রয়েছে বিরাট অবদান। 

উল্লেখ্য,জাপানের সাথে সাথে চেরি ফুল নিয়ে সারা বিশ্বেই চলে ব্যাপক উন্মাদনা। জাপানের জাতীয় ফুল বলে তারা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে।অনিন্দ্য সুন্দর এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জাপানিরা ‘হানামি’ উৎসবের আয়োজন করে প্রতিবছর।মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল জুড়ে জাপানের ‘হানামি’ উৎসব পরিণত হয় মিলনমেলায়।    

আর সি