ছবি:টোকিও বাংলা নিউজ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের সমাজে মালিশ ( তৈল মর্দন কে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় মালিশ বলা হয়ে থাকে ) নিতে পছন্দ করেন না এমন লোকও কি আছেন ? যদি থেকেও থাকেন তাহলে তা গণনার মধ্যে পড়বে কি ?
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের বর্ণনায় তৈল মর্দন হচ্ছে "বাস্তবিক তৈল সর্বশক্তিমান, যাহা বলের অসাধ্য, যাহা বিদ্যায় অসাধ্য, যাহা ধনের অসাধ্য, যাহা কৌশলের অসাধ্য- তাহা কেবল তৈল দ্বারা সিদ্ধ হইতে পারে।" তিনি আরও বলেন- "যে তৈল দিতে পারিবে তাহার বিদ্যা না থাকিলেও প্রফেসর হইতে পারে।"
তবে, মালিশ দেওয়া পছন্দ করেন না এমন লোক হয়তো অনেক রয়েছেন এ সমাজে । তারপরও বিভিন্ন স্বার্থ উদ্ধারে তাদের অনেকেই হয়তো কোন না কোন ভাবে তারা মালিশ করে থাকেন ।
তৈল মর্দনের প্রতিশব্দ হিসেবে তোষামোদ, খোশামোদ, মোসাহেবি, চাটুকারিতা ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। আর যারা এ কর্মটি করে ব্যূৎপত্তি অর্জন করতে পারে তাদেরকে বোধহয় ধামাধরা বা মোসাহেব বলা হয় ।
ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে । কেহ কম আর কেহ বা বেশী । পার্থক্য এই যা ।
যারা মালিশ পেয়ে থাকেন তারা পেয়ে যতোটা পরিতৃপ্ত থাকেন , যারা মালিশ দিয়ে থাকেন তারা কিন্তু ততোটা পরিতৃপ্ত থাকতে পারেন না। সব সময় একটা অতৃপ্ততায় ভুগতে থাকেন । কি করলে আরেকটু বেশী মালিশ করা যায়, কি করলে বস এর (সাধারনত উপর ওয়ালাকে মালিশ করা হয়ে থাকে) মন জয় করা যাবে, কি করলে নিজের স্বার্থ আদায় করা যাবে, সেই চিন্তায় মশগুল থাকতে হয় । তারা মনের দিক থেকে সব সময় ছোট হয়ে থাকে । এই সকল লোকদের কাছ থেকে জাতি ভাল কিছু আশা করতে পারে না।
এ কথা সত্যি যে, গ্রামের সহজ সরল অশিক্ষিত লোকদের চেয়ে একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত তথা কথিত স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবি নামধারীরা তৈল মর্দনে পারদর্শী বেশী হন । তারাই মাননীয়দের বিভিন্ন উপাধীতে ভূষিত করেন এই শিক্ষিত সমাজ ।
সরকার বদল হলে তৈল মর্দন প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ। তুমুল হয় এ প্রতিযোগিতা । এ যেন সেয়ানে সেয়ান ।
গ্রামে আগে দেখতাম, কেহ আর্থিক সংকটে পড়লে জিনিসপত্র কিংবা জমি বন্ধক রেখে টাকা হাওলাত নিত । এখন দেখছি আমাদের বুদ্ধিজীবিরা বিবেক বন্ধক রেখে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন পদক বাগিয়ে নেয়ার খেলায় মেতে উঠেন ।
আর বর্তমান সময়ে যেন তৈল মর্দনে নতুন মাত্রা পায়। সরকার প্রধানকে ভাষা কন্যা উপাধী দিয়ে একজন শিক্ষকতো কূটনৈতিক পদ বাগিয়ে নিয়ে শেষ জীবনটা বেশ আরাম আয়েশেই কাটিয়ে দিচ্ছেন । যদিও উপর ওয়ালা প্রদত্ত রোগবালাই থেকে মুক্তি পাননি । তাতে অসুবিধা নেই , সরকারী খরচে একটি উন্নত দেশে চিকিৎসা নিতে পারছেন ! অনেকে আবার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন।
অদুর ভবিষ্যতে হয়তোবা কোন পাঠ্য বইয়ে ভাষা কন্যা অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে । আর এতে উদ্ভুদ্ধ হয়ে অন্য একজন হয়তো ধান কন্যা কিংবা নৌকা কন্যা উপাধি দেয়ার ফন্দি ফিকির করবেন।
কথা হচ্ছে যে, শিক্ষক লোভের বশবতি হয়ে ধান কন্যা কিংবা ভাষা কন্যা উপাধী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তার কাছ থেকে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষারথীদের যে কি শিক্ষা দেয়ার যোগ্যতা রাখেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি ?
ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে এই তোষামোদেকারীদের অনেকেই আবার ভোল পাল্টে ফেলেন । নতুন মনিব এবং নতুন উপাধী খুঁজতে থাকেন।
ব্রিটিশ শাসনামলে সরকার তাদের স্বার্থে আমাদের বিভিন্ন বিশিষ্ট জনকে বিভিন্ন উপাধী দিয়ে তাদের কার্য হাসিল করতেন। আর বর্তমানে বিশিষ্টজনরা (!) সরকার প্রধানসহ অন্যান্য মাননীয়দের বিভিন্ন উপাধীতে ভূষিত করে স্বার্থ উদ্ধার করে নেন। একেই বলে যুগের বিবর্তন ! নাকি , এনালগ থেকে ডিজিটাল-এ প্রবেশ।
রাহমান মনি
জাপান প্রবাসী সাংবাদিক
[email protected]
আর এ/আর এ এস
"এই বিভাগে প্রকাশিত মুক্তমতের সকল দায়ভার লেখক নিজেই। টোকিও বাংলা নিউজ কোনভাবেই এই বিভাগে লেখক কিংবা লেখার বিষয়বস্তুর দায়ভার নিচ্ছে না।"