- শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

| পৌষ ৭ ১৪৩১ -

Tokyo Bangla News || টোকিও বাংলা নিউজ

বাংলাদেশের কারাগারেও যারা ছিলেন সক্রিয়!

রত্না চৌধুরী

প্রকাশিত: ১৫:২১, ২৭ জানুয়ারি ২০২২

বাংলাদেশের কারাগারেও যারা ছিলেন সক্রিয়!

কোন অপরাধে শাস্তি কিংবা বিচারকার্যক্রমের অংশ হিসেবেই কারাগারে যেতে হয় যেকারো। অনেকে আবার জামিনেও থাকেন চুড়ান্ত রায়ের আগের সময়কালীনগুলোতে। কিন্তু এসব কিছু যা-ই হোক, যেকোনো ব্যাক্তি কারাগারে থাকাকালীন সময় অন্যযেকোনো সাধারণ মানুষের মতো সুযোগ-সুবিধা অথবা অধিকার ভোগ করতে পারেন না, এটাই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কারাবিধি'র নিয়ম বলে আমরা জানি। কিন্তু এ সব বিধি তোয়াক্কা না করে অথবা নানা ফাঁক-ফোকড়ে যারা কারাগারে থেকেও তাদের পেশাদারিত্ব চালিয়ে গিয়েছেন তাদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

 

জেলে বসেই জঙ্গিদের ভয়ংকর পরিকল্পনা

২০২১ সালের মে মাসে জানা যায়, বাংলাদেশের কারাগার থেকেই অন্তত ৪ জন জঙ্গি জেলে বসেই মোবাইল ফোনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন তাদের কর্মীদের। এ নিয়ে তখন এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে কিছুটা হৈচৈ হলে  কারাবন্দি জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) অন্যতম শীর্ষ নেতা নাহিদ তাসনিম ও আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ নেতা আল-আমিনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

 

জেলে বসেই খুলেছেন নতুন এমএলএম ব্যবসা

ডেসটিনি গ্রুপের এমপি রফিকুল আমীন প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় নতুন এমএলএম ব্যবসা খোলেন। 'ডিটুকে' নামের এই এমএলএম কোম্পানীটির কাজে করেছেন অন্তত ৬ টি জুম মিটিং। সাংবাদিকদের হাতে আসা এই জুম মিটিংগুলোর অডিও-ভিডিও দেখে জানা যায়, জুম মিটিং তিনি বলছিলেন-মাত্র চল্লিশ মিনিট দিলেই অংশগ্রহণকারীদের ভবিষ্যৎ পাল্টে দেবেন রফিকুল আমিন। এমন বক্তব্য যখন তিনি দিচ্ছেন তখন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রত্যেক মিটিংয়ের শুরুতে তিনি যখন কথা বলেন তখন তার বক্তব্য একজন মোটিভেশনাল স্পিকারের মতই শোনায়।

 

জেলে বসেই অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে ক্যাসিনো খালেদ!

দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা সম্রাজ্য জেল থেকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন ক্যাসিনো খালেদ। জানা গেছে,তার নির্দেশমত কাজ করছেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের ১৫ জন কিলার।

খালেদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর খালেদ ধারণা করেছিলেন, দ্রুতই জামিনে মুক্ত হবেন তিনি। কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পারছেন সহজে তার জামিন হচ্ছে না। তাই জেলে বসেই অপরাধজগেতকে টিকিয়ে রাখার পরিকল্পনা করছেন তিনি। 

জানা গেছে, এই ১৫ ক্যাডারের হাতে রয়েছে শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে ৪টি অত্যাধুনিক অভিজাত অস্ত্র একে-২২।

 

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জেল থেকে কলকাঠি নাড়ছেন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জেল থেকে কলকাঠি নাড়ছেন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নূর হোসেন। এমন অভিযোগ মিলেছে নির্বাচনী প্রার্থীসহ ভোটারদের কাছ থেকে।

জানা যায়, জেল থেকে মোবাইলের মাধ্যমে নূর হোসেন নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করছেন। গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ হবার পর জেল কর্তৃপক্ষ নূর হোসেনের কাছ থেকে মোবাইল উদ্ধার করে।

 

জেলে বসেই ফেসবুক চালাচ্ছেন লিয়াকত!

সাবেক মেজর সিনহা হত্যার দায়ে আটকৃত লিয়াকত আলী কারাগারে বসেই নিজের ফেসবুক আইডি চালাচ্ছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও কারাগারে মোবাইল চালানো কিংবা সঙ্গে রাখার কোন নিয়ম নেই।

দেখা গেছে, গত ৬ আগস্ট আদালত থেকে কারাগারে যাওয়ার দিনও তার আইডির ‘প্রোফাইল পিকচার’ পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর আগে, গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ৬ আগস্ট বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৭ আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

 

জেলে বসেই নিষিদ্ধ সংগঠন চালাচ্ছে মতিন মেহেদী

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দলের প্রধান সংগঠক আবদুল মতিন মেহেদী ১৩ বছর ধরে কারাবন্দি। অভিযোগ রয়েছে, এ বন্দিদশা থেকেই তার নেতৃত্বে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করছে সংগঠনটি। জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ নভেম্বর ‘দেশের শান্তিশৃঙ্খলার পরিপন্থী কার্যক্রম পরিচালনা ও ‘জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হওয়ায় আল্লাহর দল কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ নিয়ে গত ১৯ আগস্ট রাজধানী থেকে তিন সহযোগীসহ আব্রাহিম আহমেদ হিরোকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনিই র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, কারাবন্দি মতিন মেহেদীর নির্দেশনাতেই এখনো চলছে তাদের সংগঠন।

 

রূপপুর বালিশকান্ডের হোতা জেলে বসেই দেখালেন তেলেসমাতি!

রূপপুর বালিশকান্ডের প্রধান হোতা  ঠিকাদার সাজিন এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহাদাত হোসেন জেলে বসেই দেখালেন তেলেসমাতি। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত হওয়া তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাজিন এন্টারপ্রাইজ ও তার সিন্ডিকেটের বদৌলতে শাহাদাত হোসেন বাগিয়ে নিয়েছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকার উন্নয়নকাজের বেশির ভাগ।

এখানে সাজিন এন্টারপ্রাইজকে কালো তালিকাভুক্ত করায় ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন শাহাদাত। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহাদাতের আরেক প্রতিষ্ঠান সাজিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নামে আলাদা দুটি ভবন নির্মাণের ৮৭ কোটি টাকার কাজ দিয়েছে।

জেলে বসে একই জেলার মধ্যে তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাগিয়ে নেয়ায় অবাক হয়েছেন সবাই।

এর আগে, রূপপুর আবাসিক ভবনে বালিশ ওঠানোকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো।শুধু বালিশই নই,বৈদ্যুতিক চুলা,টেলিভিশন সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় ও তা আবাসিক ভবনের বিভিন্ন তলায় উঠানোর জন্য অকল্পনীয় মূল্য দেখিয়ে সারা দেশের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাজিন এন্টারপ্রাইজ। সাজিন এন্টারপ্রাইজ একটি বালিশ ওঠানোর জন্য খরচ দেখিয়েছিলো ৭৬০ টাকা।বালিশ কেনায় দেখিয়েছিলো পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। বৈদ্যুতিক চুলা ভবনে ওঠানোর খরচ দেখানো হয়েছিলো ছয় হাজার ৬৫০ টাকা। টেলিভিশন ভবনে ওঠানোর খরচ দেখানো হয় সাত হাজার ৬৩৮ টাকা। দুর্নীতির এমন এলাহি কাণ্ড ঘটিয়ে ঠিকাদার সাজিন এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহাদাত হোসেন দেশজুড়ে সমোলচিত হোন।তার বিতর্কিত কাণ্ডে সরকারকে পড়েছিল ভাবমূর্তি সংকটে। দেশজুড়ে তোলপাড় ওঠার পর দুদকের মামলায় সেই শাহাদাতসহ ১৩ জন এখন জেলে রয়েছেন অনেক দিন ধরেই।

আর এ এস/আর এ