বাংলাদেশে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে দেশটির বাইরে এবং ভিতরে নানা প্রশ্ন এবং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান থাকার কারনে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে গুরুতরভাবে এসেছে বিষয়টি। বিশেষ করে গত কয়েকবছরে রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে কিংবা ক্ষমতার দাপটের জের ধরে দেশটিতে অস্বাভাবিকহারে গুম, খুন বেড়ে যাওয়াতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ৭ জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেছে ব্যাপকভাবে। এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে পশ্চিমাদেশগুলোতেও বাংলাদেশ বিষয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যার কারণে বাংলাদেশে অবস্থিত পশ্চিমা এই দেশগুলোর প্রতিনিধিদের কথাবার্তাতে এসেছে ভিন্নতা। এ নিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশে বৃটিশ হাইকমিশন বলেন, বাংলাদেশে ভয়মুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্যসহ উন্নয়ন সহযোগীরা। এর লক্ষ্য হলো স্বচ্ছ গণতন্ত্র। এটি সম্ভব হলে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকবে এবং বিনিয়োগ বাড়বে। আর নির্বাচন নিয়ে বড় সমস্যা হলে যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ নিয়ে হয়ত নতুন করে চিন্তা করবে। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টেও বাংলাদেশের উপর অবরোধের দরখাস্ত আসে। যদিও পরে ইইউ’র বাংলাদেশ প্রধান চার্লস হোয়াইলি এ ঘটনা ইইউ'র একজন সদস্যের ব্যাক্তিগত বিষয় বলে উল্লেখ করেন। তবে এ প্রতিক্রিয়া দেবার সময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। এ জন্য চলমান ঘটনা প্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন পরবর্তীসময়ের মধ্যে গত কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে নানা চাপ লক্ষ করা গেছে দেশটির উপর। এ নিয়ে সরকারের সংসদীয় কমিটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে চাপ প্রতিয়মান হচ্ছে বলে বলা হয়েছিল। সূত্র থেকে জানা গেছে, শ্রম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করছে বলে জানায় পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়।
এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইইউভুক্ত দেশের কূটনীতিকদের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। গাজীপুরের একটি অভিজাত রিসোর্টে সকাল ১০টায় এ সম্মেলন শুরু হয়ে চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। সংশ্নিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি একটি জাতীয় দৈনিককে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় জানিয়েছেন, এ বৈঠক শুধু গত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও এ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য।
সূত্র জানায়, এ সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত, ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং মিশনের পদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বাংলাদেশে ইইউ এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোর মিশনের কার্যক্রম, বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউ এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনেও প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নানা আলোচনা চলছে। ইইউ রাষ্ট্রদূত কয়েকদিন আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিট দ্য প্রেসে অংশ নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইইউর আগ্রহ আছে এবং নির্বাচন ঘিরে ঘটনাপ্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইইউ। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ইউরোপীয় বন্ধু রাষ্ট্রগুলো আগামীতে বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এ সম্মেলনে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, তা জানা না গেলেও চলমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নির্বাচন প্রসঙ্গ আলোচনায় আসতেই পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিও সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউর নানা আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়টিও আলোচিত হতে পারে।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এর আগেও ঢাকায় ইইউর এ ধরনের বার্ষিক সম্মেলন হয়েছে। কভিড-১৯ মহামরির কারণে গত দুই বছর ভার্চুয়ালি হয়েছে। তবে এবারই প্রথম ঢাকার বাইরে বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। সূত্র আরও জানায়, এ ধরনের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় বাইরে জানানো হয় না। তবে এ বৈঠকগুলোতে সাধারণভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক, দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় এবং এজেন্ডাভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার কী ধরনের কার্যক্রম চলছে, তা আলোচিত হয়। এই কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ গতিপথ কী হবে তাও আলোচনায় আসে। সূত্র আরও জানায়, এ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে ইইউ এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোর মিশনের কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কার থাকারও সুযোগ নেই।
তবে অপর একটি সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমপক্ষে একজন কর্মকর্তার এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা। তবে যোগ দিয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়।
আর এ