ছবি: সহস্রধারা ঝর্ণা
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অনেক দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলা একটি। নামকরণের ইতিহাস ঘেঁটে তেমন কিছু একটা না পাওয়া গেলেও, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে 'রামের স্ত্রী সীতা এই উপজেলায় আসেন, এবং একটি কুণ্ডে স্নান করেন', এরপর থেকে ওই জায়গাকে সীতার কুণ্ড নামে ডাকা হতো। বেশিরভাগ প্রচলিত কাহিনীগুলোই 'সীতা' এবং 'একটি কুণ্ড'র সঙ্গে সম্পর্কিত।
কি কি আছে সীতাকুণ্ডে
সীতাকুণ্ড উপজেলাটি সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এবং প্রায় ৩৫ কিলোমিটার বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত দিয়ে ঘেরা।এ উপজেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলো হচ্ছে সীতাকুণ্ড পাহাড়, সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক, সুপ্তধারা এবং সহস্রধারা ঝর্ণা, বাঁশবাড়িয়া এবং গুলিয়াখালি সৈকত। এছাড়া সীতাকুণ্ড পাহাড়ে রয়েছে তিনটি মন্দির। পাহাড় যেখানে শুরু সেখানে একটি, রাম-সীতা মন্দির। প্রচলিত আছে সত্য যুগে এক দক্ষ রাজা মহাদেবের ওপর প্রতিশোধ নেবার জন্য এক যজ্ঞের আয়োজন করে। এ যজ্ঞের কারণ ছিল ওই দক্ষ রাজার কন্যা 'সতী'। কারণ পিতার অনুমতি ছাড়াই সতী বিয়ে করেছিল মহাদেবকে। দক্ষ নারাজ ছিলেন নিজের মেয়ের ওপর, বিরক্ত ছিলেন মহাদেবের ওপরও। দক্ষ রাজা মহাদেব ও সতী ছাড়া বাকি সকল দেব-দেবীকে সেই যজ্ঞে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মহাদেবের অনিচ্ছা থাকার পরও সতী মহাদেবের সকল অনুসারীদের নিয়ে যজ্ঞের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।
সতী আমন্ত্রণ না পেয়ে অনুষ্ঠানে আসেন। দক্ষ রাজা তাকে কোনও সম্মান তো করেনই না, উল্টো মহাদেবকে প্রবল অপমান করেন। স্বামীর এই অপমান সইতে না পেরে সঙ্গে সঙ্গে আত্মহত্যা করে বসেন সতী। সতীর মৃত্যু সংবাদ শুনে মহাদেব শোকে ও অপমানে প্রচণ্ড রেগে যান। দক্ষের যজ্ঞের বারোটা তো বাজানই, সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী এক প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। মহাদেবের এই কাণ্ডে পৃথিবী ধ্বংস হবার উপক্রম হয়। অন্যান্য দেবতা অনেক অনুরোধ করে মহাদেবকে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং সকল দেবতার অনুরোধে বিষ্ণুদেব তার সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহকে ছেদন করেন। ফলে তার দেহের বিভিন্ন অংশ ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে পড়ে। তার দেহের অংশবিশেষ যেসব অঞ্চলে গিয়ে পড়ে সেসব অঞ্চলকে শক্তি-পীঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিংবদন্তী অনুসারে, সতীর দেহের বাম হাত এসে পড়েছিল সীতাকুণ্ডের এই চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায়।
বাকি দুটো মন্দির আছে পাহাড়ের ওপরে। একটি পাহাড়ের মাঝে, নাম বীরুপাক্ষ মন্দির এবং একদম চূড়ায় একটি, নাম চন্দ্রনাথ মন্দির। চন্দ্রনাথে উঠার পর দেখতে পাবেন কি পরম নিশ্চিন্তে, সমুদ্রের কোলে শুয়ে আছে সীতাকুণ্ড উপজেলা। হালকা বৃষ্টির দিনে গেলে পাবেন পাহাড়ের জলদগম্ভীর রূপ। ঘন মেঘে বেষ্টিত সীতাকুণ্ড পাহাড়টাকে মনে হবে সাদা ঢাল হাতে দাঁড়ানো পৌরাণিক কোনও যোদ্ধা। যে যুদ্ধ জয় করে এসে টানটান চিত্তে সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
সীতাকুণ্ডে আরও আছে হাজারীখিল ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি, কালের আবর্তনে দুর্গম হয়ে যাওয়া রহস্যময় পাতালকালী মন্দির, গহীন জঙ্গলের মাঝে বুক চিরে ঝরঝরি ঝর্ণায় চলে যাওয়া ঝরঝরি ট্রেইলসহ আরও অনেক কিছু।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড বাসে অথবা ট্রেনে যাওয়া যায়। রাতে বাস ধরলে একেবারে কাক ভোরে নেমে যেতে পারবেন সীতাকুণ্ড বাজারে। বাঁশবাড়িয়া এবং গুলিয়াখালী দুইদিনের দুই বিকেলবেলার জন্য রেখে দিয়ে দিনের বেলা ঘুরে আসুন অন্যান্য স্পটগুলো। বিকেলবেলার সমুদ্র প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে কাজ কোরে, সারাদিনের ক্লান্তি ধুয়ে মুছে নিয়ে যাবে। পুরোপুরি রিফ্রেশড হয়ে ফিরে আসতে পারবেন নিজ নিজ কর্মস্থুলে।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুণ্ডে থাকার মতো জায়গা তেমন একটা নেই। বাজারে 'সাইমুন' এবং 'সন্দ্বীপ' নামের দুটি হোটেল আছে। পাশে বড় কুমিরায় ঘাটের পাশে আছে ‘থ্রি স্টার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ নামের আরেকটি হোটেল। সীতাকুণ্ডের হোটেলগুলোর মান ভালো না থাকলেও বড় কুমিরার থ্রি স্টার হোটেলে থাকতে পারেন।
আর সি